স্যামসং গ্যালাক্সি ট্যাব এস রিভিউ

রেটিংকিনবেন কোত্থেকে
Very GoodN/A

ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য জগতের টেক জায়ান্ট স্যামসাং নতুন পণ্য হিসেবে বাজারে এনেছে আকর্ষণীয় স্যামসং গ্যালাক্সি ট্যাব এস। এই ট্যাবটি ১০.৫ ইঞ্চি এবং ৮.৪ ইঞ্চি – এই দুই আকারে ও সাদা এবং ব্রোঞ্জ রঙে পাওয়া যাচ্ছে। এই ডিভাইসটির মাধ্যমে স্যামসাং এবার তাদের ট্যাবের মধ্যে ডিজাইনে নতুনত্ব, এবং হাই পারফরম্যান্স ও অধিক শক্তিশালী হার্ডয়্যারের সমন্বয় ঘটিয়েছে যা সহজেই গ্যাজেট প্রেমীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।

নকশা, নান্দনিকতা ও বৈশিষ্টসমূহ

যারা ট্যাব কিনার চিন্তা করছেন আর ভাবছেন কোন ট্যাবটি কিনা যায়, স্যামসং গ্যালাক্সি ট্যাব এস তাদের নজর কাড়বে। এর আকর্ষণীয় এবং ঝকঝকে সুপার এমোলেড ডিসপ্লেটির নেটিভ রেজুলেশন ২৫৬০*১৬০০ পিকজেল এবং পিকজেল ডেনসিটি ২৮৮ppi (Tab S 10.5)। যদিও ট্যাবটির পিছনের কভারটি প্লাষ্টিক নির্মিত, তবুও মাত্র ০.২৬ ইঞ্চি পুরুত্বের, ৯.৭৪ ইঞ্চি দৈর্ঘের, এবং ৬.৯৮ ইঞ্চি প্রস্থের ট্যাবটি খুব সহজেই বহনযোগ্য। স্যামসং গ্যালাক্সি S5-এর মতই এই ট্যাবটিতেও সংযোজন করা হয়েছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর যা ট্যাবটির নিরাপত্তায় যোগ করেছে এক নতুন মাত্রা। ফিঙ্গারপ্রিন্ট ট্যাব সেটিংস এর সিকিউরিটিতে নিবন্ধন করিয়ে হোম বাটনের উপর আঙ্গুল সোয়াইপ করলেই ট্যাবটি লক হয়ে যাবে নির্দিষ্ট ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর অধীনে।

স্যামসং গ্যালাক্সি ট্যাব এসঅন্যান্য ট্যাবগুলোর মতই এই ট্যাবটিতেও রয়েছে বিভিন্ন বাটন, পোর্ট, স্পিকার ইত্যাদি। এর ডানপাশে রয়েছে মাইক্র ইউএসবি (USB) ২.০ পোর্ট, মাইক্রো এসডি কার্ড স্লট, এবং একটি স্পিকার। ডানপাশে রয়েছে আরও একটি স্পিকার এবং একটি ৩.৫ মি.মি ইয়ারফোন/হেডসেট পোর্ট। ট্যাবটির উপরের দিকে রয়েছে পাওয়ার বাটন, ভলিউম বাটন, ইনফ্রারেড ব্লাষ্টার; এবং নিচের অংশে রয়েছে শুধুমাত্র মাইক্রোফোন। ট্যাবটিকে সামনের দিকে ধরলে নিচের মাঝ বরাবর দ্যাখা যাবে এর হোম বাটন যার বামেই রয়েছে টাস্ক ম্যানাজার বাটন এবং ডানে রয়েছে ব্যাক বাটন। উপরের দিকের প্রায় মাঝ বরাবর রয়েছে একটি ২.১ মেগাপিক্সেলের সেকেন্ডারি ক্যামেরা যার ঠিক পাশেই লাইট সেন্সর। ট্যাবটির পিছনের দিকে রয়েছে ৮ মেগাপিক্সেলের প্রাইমারি ক্যামেরা এবং তার ঠিক নিচেই LED ফ্লাশলাইট। এছাড়াও পিছনে রয়েছে এক্সেসরিজ ব্যবহার করার জন্য দুইটি বৃত্তাকার কানেক্টর।

গুণগত মান এবং কার্যদক্ষতা

স্যামসং গ্যালাক্সি ট্যাব S এর পারফরম্যান্সের বিষয়ে প্রথমেই বলতে হয় এর প্রসেসর এবং অপারেটিং সিষ্টেম এর কথা। এতে রয়েছে এক্সাইনস ৫ অক্টা ৫৪২০ (কোয়াড কোর ১.৯ গিগাহার্টজ কর্টেক্স এ-১৫ এবং কোয়াডকোর ১.৩ গিগাহার্টজ এ-৭)। কিছুটা ব্যাটারী পাওয়ার বেশী লাগলেও প্রয়োজন অনুযায়ী দ্রুত গতির প্রসেসরটি চালু হয়ে অপেক্ষাকৃত কম দ্রুত গতির প্রসেসরটি বন্ধ হয়ে ব্যবহারকারীকে দিবে কাংক্ষিত স্পীড এবং পারফরমেন্স। দ্রুত গতির প্রসেসর ছাড়াও এতে রয়েছে ৩ গিগাবাইট ডিডিআর৩ (DDR3) র‌্যাম যা অনেক হাই পারফর্মেন্স এপ্লিকেশন চালানোর জন্য সহায়ক।

স্যামসং গ্যালাক্সি ট্যাব এসট্যাবটিতে দেয়া আছে এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিষ্টেম কিটক্যাট ৪.৪.২। তবে ট্যাবটিকে নতুন ঘোষণাকৃত সর্বাধুনিক অপারেটিং সিষ্টেম Android L-এ আপডেট করা যাবে। তবে কিটক্যাট ৪.৪.২ ট্যাবটির র‌্যাম-এর প্রায় ১.৮২ গিগাবাইট সবসময় ব্যবহার করতে থাকে যার ফলে ব্যবহারযোগ্য র‌্যাম থাকে ১.১৮ গিগাবাইট যা হাই পারফমেন্স এপ্লিকেশন চালানো ও মাল্টিটাস্কিং এর ক্ষেত্রে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। এই বিষয়টি বাদ দিলে স্যামসাং নতুন যেসব ফিচার এবং এপ্লিকেশনের সমাহার এই ট্যাবটিতে দিয়েছে তা প্রশংসনীয়। ট্যাবটির সাথে পাওয়া যাবে মার্ভেল কমিকস এর ৩ মাসের সাবস্ক্রিপশন যা আমার মত কমিক প্রেমীদের অবশ্যই দৃষ্টি কাড়বে।

ট্যাবটির আরেকটি উল্লেখযোগ্য ফিচার হলো Sidesync 3.0। এই সফটয়্যারটির মাধ্যমে Wi-Fi দিয়ে ট্যাবটিকে মোবাইলের সাথে সংযোগ করে নিয়ে মোবাইলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফিচার ট্যাবের মাধ্যমেই পরিচালনা করা যায়। যেমন মোবাইল চার্জে থাকলে ট্যাবের মাধ্যমে মোবাইল থেকে কল করা, গেম খেলা, ইন্টারনেট ব্রাউজ করা যাবে অনায়াসেই। যদিও এখন পর্যন্ত মোবাইলের অল্প কিছু ফিচারই কেবল পরিচালনা করা যাচ্ছে, ভবিষ্যতে স্যামসাং এই সফটয়্যারটিকে আরও উন্নত অবস্থায় নিয়ে যাবে বলেই আমার বিশ্বাস।

ট্যাবটিতে ব্যবহার করা হয়েছে বেশ শক্তিশালী GPU। গেমারদের জন্য সুখবর হল এর Adreno 330 জিপিইউ বিভিন্ন গ্রাফিক্স ইন্টেনসিভ গেম যেমন ইঞ্জাস্টিস, ম্যাডেন মোবাইল, ফিফা ১৪ ইত্যাদি কোন ল্যাগ ছাড়াই খেলতে সাহায্য করে। তাছাড়া সুপার এমোলেড ডিসপ্লে গেমিং-এ যোগ করেছে নতুন মাত্রা। 3d বেঞ্চমার্কে ট্যাবটির স্কোর হল ১৬৪৩৪ যা সত্যিই প্রশংসনীয়।

স্যামসং গ্যালাক্সি ট্যাব এসট্যাবটির ভিডিও প্লে­ব্যাক নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। সুপার এমোলেড ডিসপ্লে এবং হাই রেজুলেশনের কারণে যেকোন ভিডিও বা মুভি দেখার জন্য এটা অদ্বিতীয়। এছাড়াও ট্যাবটি এর ব্যবহারকারীকে দিচ্ছে বিভিন্ন মোড ঠিক করে নেয়ার স্বাধীনতা। এর উজ্জ্বল স্ক্রীন এবং উন্নত কালার কন্ট্রাস্ট এর কারণে ভিডিও অথবা মুভি দেখার সময় প্রত্যেকটি রঙ এবং রঙ্গের গভীরতা আলাদাভাবে বুঝা যাচ্ছে অনায়াসেই। এবং এর স্ক্রীন উজ্জলতার কারণে ঘরের বাইরেও রোদের মধ্যে ট্যাবটির স্ক্রীণ দেখতে তেমন কোন অসুবিধা হয়না।

স্যামসং গ্যালাক্সি ট্যাব এস -এ রয়েছে 7900 mAh ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাটারী যা দীর্ঘ সময় ধরে ট্যাবটি ব্যবহার করার জন্য অনেক সহায়ক। ব্যাটারীটি ট্যাবের ভিতরে সিল করা; অর্থাৎ ব্যাটারীটি পরিবর্তনযোগ্য নয়। ব্যাটারীটি চার্জ করতে প্রায় ৪ ঘন্টার মত সময় লেগে যায়। তবে ব্যাটারীটির চার্জ ৩৫-৪০% থাকতে আবার চার্জ দিলে মাত্র ১ ঘন্টার মধ্যে আবার ১০০% চার্জ করে নেয়া সম্ভব। এই ব্যাটারী ট্যাবটিকে ৪৮ ঘন্টা স্ট্যান্ডবাই ব্যাকআপ দেয়। তবে হাই পারফরমেন্স গেম খেলার সময় বা হাই ডেফিনেশন মুভি এবং Wi-Fi ব্যবহার করে ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের ক্ষেত্রে ট্যাবটির ব্যাটারী প্রায় ১০ ঘন্টার মত ব্যাকআপ দেয় যা সারাদিন ব্যবহার করে রাতে ঘুমানোর আগে চার্জ এ দেয়ার আগ পর্যন্ত ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট।

সুবিধাঅসুবিধা
প্রশংসনীয় স্লিম ডিজাইন। এ্যামোলেড এইচডি ডিসপ্লে। মজবুত গঠণ। লোভনীয় হার্ডওয়্যার কনফিগারেশন। এ্যান্ড্রোয়েড ললিপপ-এ আপগ্রেডেবল। প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি দুটি ক্যামেরাতেই ছবি ভালো ওঠে। চড়া দাম। প্লাস্টিক বডি। এই দামে মেটাল বডি হলে আরও পছন্দনীয় হতো।

বিবরণ

স্যামসং গ্যালাক্সি ট্যাব এসপ্রোডাক্ট মডেলঃ Samsung Galaxy Tab S
ডাইমেনশনঃ ২৪৭.৩ * ১৭৭.৩ * ৬.৬ মি.মি /৯.৭৪* ৬.৯৮* ০.২৬ ইঞ্চি
ওজন: ৪৬৭ গ্রাম/১.০৩ পাউন্ড

ডিসপ্লেঃ সুপার এমোলেড, ২৫৬০*১৬০০ পিক্সেল, ২৮৮পিপিআই
মেমোরিঃ ১৬/৩২ গিগাবাইট (ইন্টারনাল), ৩ গিগাবাইট র‌্যাম, মাইক্রো এসডি কার্ড ১২৮ গিগাবাইট পর্যন্ত।
ক্যামেরাঃ ৮ মেগাপিক্সেল প্রাইমারি ক্যামেরা, অটোফোকাস, এলইডি ফ্ল্যাশ, ২.১ মেগালিক্সেল সেকেন্ডারী ক্যামেরা।
অপারেটিং সিষ্টেমঃ এন্ড্রয়েড কিটক্যাট ৪.৪.২
প্রসেসরঃ এক্সাইনস ৫৪২০ (কোয়াডকোর ১.৯ গিগাহার্টজ কর্টেক্স এ-১৫ এবং কোয়াডকোর ১.৩ গিগাহার্টজ এ-৭)
জি পি ইউঃ এড্রিনো ৩৩০
ব্যাটারীঃ লিথিয়াম আয়ন 7900mAh

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।