স্যামসাং RT48FAJEDSP ফ্রিজ রিভিউ

রেটিংকিনবেন কোত্থেকে
DecentN/A

বর্তমান বিশ্বের ইলেকট্রনিক্স জাতীয় পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রস্তুতকারক হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান স্যামসং। ফ্রিজ, টিভি, এয়ার কন্ডিশন, ওয়াশিং মেশিন, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ইত্যাদি গৃহস্থালি পণ্যের বাজারে স্যামসাং অবশ্যই অন্যতম শ্রেষ্ঠ। ভোক্তাদের চাহিদাকে মাথায় রেখে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ বেশ কয়েকটি টপ-মাউন্টেড (অর্থাৎ ডিপ-ফ্রিজ ওপরে) ফ্রিজ স্যামসাং বাজারজাত করেছে। এরই মধ্যে একটি হলো স্যামসাং RT48FAJEDSP ফ্রিজ – যেটি আমরা আজ রিভিউ করেছি।

নকশা, নান্দনিকতা ও বৈশিষ্টসমূহ

স্যামসাং RT48FAJEDSP ফ্রিজ

স্যামসাং RT48FAJEDSP ফ্রিজটি ২.২২ ফিট গভীর, ২.৩৫ ফিট চওড়া, এবং ৫.৮৬ ফিট উঁচু। ফ্রিজের সর্বমোট ধারণ ক্ষমতা হচ্ছে ৩৮৫ লিটার, ফ্রিজারের ধারণ ক্ষমতা হচ্ছে ৮৭ লিটার, রেফ্রিজারেটরের ধারণ ক্ষমতা ২৯৮ লিটার এবং সামগ্রিক ধারণ ক্ষমতা হচ্ছে ৪৮০ লিটার। নো ফ্রস্ট প্রযুক্তি থাকার কারণে ডিপ-ফ্রিজের খাবারগুলোতে বরফ জমে যায় না। ফ্রিজটির ডিওডোরাইজিং ফিল্টার কার্বন দ্বারা নির্মিত যার কারণে বাজে গন্ধ হয় না।

স্যামসাং RT48FAJEDSP ফ্রিজটি বাইরে থেকে অসাধারণ মনে না হলেও চালাবার সাথে সাথেই বোঝা গেল অন্যান্য কম দামী ফ্রিজের মাঝে এর বিশেষত্ব কি। ফ্রিজটি চালু হবার সময় কোন ঝাকুনি হয় না, এবং এর কম্প্রেসরের শব্দ খুবই ক্ষীণ। রেফ্রিজারেটরের দরজা খুলতেই মসৃণ সাদা আলোর লেডলাইটে ফ্রিজের ভেতরটাকে স্বাস্থ্যকর এবং সজীব বলে মনে হলো। আমরা সব রকম খাবার দাবার এতে ভরে রাখলাম। স্যামসাং যে উচ্চ মধ্যবিত্ত কিংবা সৌখিন মধ্যবিত্তদের ভালোই খবর রাখে সেটা বোঝা গেল ফ্রিজের ভেতরে খাবার সাজিয়ে গুছিয়ে রাখার সুন্দর ব্যবস্থা দেখেই।

স্যামসাং RT48FAJEDSP ফ্রিজরেফ্রিজারেটরের ফ্রেসরুমে (সবচে উপরের থাক) ডেইরী প্রোডাক্ট যেমন ছানা, পুডিং, পেস্ট্রি, রসমালাই ইত্যাদি খাবার যেগুলো সহজেই নষ্ট হয়ে যায় বা খাদ্যগুণ হারিয়ে ফেলে সেগুলো রাখা যায়। আমরা রেখেছিলাম ছানা, রসমালাই, আর ছানার জিলেপি। তবে ফ্রেসরুম বক্সটির নিচেই ঠিক মাঝখানে রয়েছে তাপমাত্রা কম বেশি করার ডায়াল। ডায়ালটা মাঝখানে না থেকে এক সাইডে থাকলে ভালো হতো। খাবার বেশি রাখা হলে ডায়ালটি পর্যন্ত হাত পৌছাতে কষ্ট হবে; তবে এ সমস্যা এড়াতে ডায়ালটির সামনে উঁচু কোন ডিশ না রাখলেই হবে। তবে ভয়ের কিছু নেই, নিচের আরও তিনটি থাকে যথেষ্ট পরিমাণ খাবার রাখা সম্ভব। আমরা প্রায় ২ লিটার ধারণ ক্ষমতার ৬টি বাটির একেকটিতে ভাত, মাছ, গরুর মাংস, মুরগীর মাংস, রান্না সবজি, এবং ডাল রাখি। এছাড়া ছোট আকৃতির চারটি বাটিতে বিভিন্ন রকম ভর্তা ও ভাজি রাখি (কৃতিত্ব আমাদের কলিগ ফারজানার)। এগুলো রাখার পরও আরও একটি দুই লিটার ধারণ ক্ষমতার বাটি ও তিন চারটি ছোট বাটি ঠাসাঠাসি করে রাখার মতো যথেষ্ট জায়গা ছিল।

ফারজানার ভাষায়, ছয়-সাতজন সদস্যের মধ্যবিত্ত পরিবারের খাবার রাখার জন্য ফ্রিজটিতে যথেষ্ট জায়গা আছে। ভেজিটেবল বক্সে রাখা হলো কাচামরিচ, শষা, টমেটু, ক্যাপসিকাম, কচু, ছোট লাউ থেকে শুরু করে শাঁক এবং অন্যান্য সবজি। ডিপ ফ্রিজে রাখা হলো ১০ কিলোগ্রাম গরুর মাংস, ৫টা মুরগীর মাংস, এবং চারটি মাঝারি ইলিশ, এবং একটি বড় রুই মাছ। এগুলো রাখার পরও প্রায় অর্ধেক জায়গা ফাঁকা ছিল। তবে ডিপ ফ্রিজের একদম ওপরের অংশটি বাঙ্গালী মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে জায়গার অপচয় মনে হলেও ইয়াং জেনারেশনের জন্য ওটা খুবই আকর্ষণীয় একটি ফিচার হবে বলে মনে করি। ওপরের অংশটাতে বরফ বানানোর আলাদা চেম্বার আছে এবং এর পাশেই আইসক্রিম জাতীয় কিছু রাখতে পারবেন। সাধারণ কমদামী ফ্রিজে আইস চেম্বার থাকে না এবং প্লাস্টিকের আইস হোল্ডারে পানি ভরে বরফ বানাতে হয়। অনেকের কাছেই ওইভাবে বরফ বানানোটা ঝক্কিময় এবং অস্বাস্থ্যকর । তবে স্যামসাং-এর এই ফ্রিজটিতে এই ঝামেলার বিষয়টি ভালোই এড়ানো হয়েছে। বরফ একদম ওপরে একটি আলাদা কম্পার্টমেন্টে থাকবে এবং মাংস, মাছ ইত্যাদির সংস্পর্শেও আসবে না।

স্যামসাং RT48FAJEDSP ফ্রিজফ্রিজের দরজার সাথের থাকগুলো বেশ কার্যকর। যেমন ওষুধ রাখার একটি বিশেষ কম্পার্টমেন্ট রয়েছে যেটা সাধারণ কমদামী ফ্রিজে দেখা যায় না। ওখানে আপনি ইনসুলিন বা এ জাতীয় ওষুধগুলো সংরক্ষণ করতে পারবেন। এর পাশেই রয়েছে আরও একটি ছোট বোতল রাখার কম্পার্টমেন্ট। আর সবার ওপরে রয়েছে ডিম রাখার জায়গা। এছাড়া ১ বা ১.৫ লিটারের ৫টি চিকন পাণীয়ের বোতল রাখার জন্য রয়েছে একটি থাক। সাধারণ ফ্রিজের দরজার গ্যাসকেট (দরজার সাথের সিল যা দেখতে রাবার বা প্লাস্টিকের মতো)-এর চাইতে স্যামসাং-এর এই মডেলটির গ্যাসকেট বেশী টেকসই এবং সহজে দরজা খোলা ও লাগানোর জন্য উপযোগী।

ফ্রিজটির বাহ্যিক ও ভেতরের সব কিছুই বেশ মজবুত এবং এর ডিজাইনে রুচির ছাপ আছে। তবে এই মডেলটি কেবল একটি রঙ্গেই পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে সিলভার রঙ্গের মধ্যেই আপনার পছন্দের সুযোগকে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে স্যামসাং।

গুণগত মান এবং কার্যদক্ষতা

আমরা খাবারগুলো রাখার পর প্রায় ৪৭ ঘন্টা পর্যন্ত ফ্রিজটির পারফরমেন্স পর্যবেক্ষণ করি। এর মাঝখানে আমরা অনেকবার রেফ্রিজারেটর এবং ডিপ ফ্রিজের দরজা খুলে এটা ওটা বের করে খাওয়া দাওয়াও করি। সব সবজিই টাটকা এবং একদম প্রথমদিনের মতো সজীব দেখাচ্ছিল। কোন ধরণের শুঁটকে যাওয়া বা এরকম কিছু সবজিতে দেখিনি; এক্ষেত্রে ফ্রিজের এ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়া প্রযুক্তিকে ধন্যবাদ দিতেই হবে। অন্য খাবারগুলোর খাদ্যগুণ এবং স্বাদ অপরিবর্তীত ছিল। এবং ফ্রিজের ভেতর গোটা সময়টাতে একটা স্বাস্থ্যকর আবহাওয়া লক্ষ্য করেছি, কোন বাজে গন্ধ বা আদ্রতাহানী ছিলনা। ডিপ ফ্রিজে কোন বরফ জমেনি, যদিও মাছ, মাংস এবং অন্যান্য খাবারগুলো একদম হীম হয়েছিল। এটাই নো-ফ্রস্ট ফ্রিজের সুবিধা, মাংস বা মাছের প্যাকেট নিয়ে টানা হ্যাচরা, বা দরজা খুলে রেখে এক ঘণ্টা ধরে বরফ গলার অপেক্ষাও করতে হয়নি। আইস চেম্বারে বরফগুলোও সুন্দর জমেছিল। আমরা বেশ কয়েকবার ফাস্ট কুলিং মোডের বোতাম  চেপে দোকান থেকে আনা নরমাল এ্যাপলফিজকে নিমেষেই ঠান্ডা করে পান করেছি।

স্যামসাং RT48FAJEDSP ফ্রিজটির কম্প্রেসর চালু হবার সময় সাধারণ ফ্রিজের মতো জোড়ে শব্দ হয় না। আমরা ৪৭ ঘণ্টার মধ্যে মাঝখানে প্রায় ৭ ঘন্টা ফ্রিজটিকে বন্ধ রাখি। স্যামসাং দাবী করে বিদ্যুতহীন অবস্থাতেও এই মডেলটি ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত সব খাবারের খাদ্যগুণ ও সজীবতাকে অটুট রাখে। স্যামসাং এর দাবীর সাথে মডেলটির পারফরমেন্স সামঞ্জস্যপূর্ণ বলেই মনে হয়েছে আমাদের কাছে। কেননা ঐ ৭ ঘন্টার মধ্যেও আমরা বহুবার ফ্রিজটির দরজা খুলেছি এবং প্রতিবারই ফ্রিজের ভেতরের পরিবেশে কোন ত্রুটি পাইনি।

সুবিধাঅসুবিধা
অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়া প্রোটেকটর, ডিওডেরাইজিং ফিল্টার, নো-ফ্রস্ট সুবিধা, ফাস্ট কুলিং মোড, বিদ্যুৎ সাশ্রয়, ফ্রিজের নিচে চাকা আছে। ১০ বছরের ওয়ারেন্টি। দাম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। এই ফ্রিজটি শুধু সিলভার রঙেই পাওয়া যায়।

সিদ্ধান্ত

স্যামসাং RT48FAJEDSP ফ্রিজ টির দাম মধ্যবিত্তদের সাধ্যের বাইরে থাকলেও খাদ্যের সজীবতা, সুস্বাস্থ্য, উন্নত প্রযুক্তি, বিদ্যুতের বিলের বেশ খানিকটা সাশ্রয়, এবং ফ্রিজের টেকসই হওয়ার দিকগুলো মাথায় রেখে বলতেই হয় স্যামসাং-এর এই মডেলটি সাধারণ ফ্রিজের থেকে যথেষ্ট বেশি বাঞ্ছনিয়। উচ্চবিত্তরা নিশ্চয়ই ডাবল ডোরের আরও বেশি ফ্যাশনেবল এবং আরও বেশি কর্মদক্ষ ফ্রিজ কিনবেন, তবে স্যামসাং RT48FAJEDSP-এর দাম কিছুটা কম হলে মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণীতেও এর চাহিদা অনেক বেড়ে যেতো।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।