ওয়াল্টন PRIMO ZX রিভিউ

রেটিংকিনবেন কোত্থেকে
DecentN/A

বাংলাদেশে মধ্যম বাজেটের ফোন ক্রেতাদের কাছে ওয়ালটন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর নতুন স্মার্টফোন ওয়াল্টন Primo ZX ইতোমধ্যে বাজারে শক্ত স্থান দখল করে নিয়েছে। ২.১ মি.মি পুরুত্বের এবং মাত্র ১৫০ গ্রাম ওজনের স্মার্টফোনটিতে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন চিপসেট এবং এড্রিনো জিপিইউ এর সংযোজন এবং এর সাথে ঝকঝকে ফুল এইচডি ডিসপ্লে মোবাইলপ্রেমীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।

নকশার নান্দনিকতা ও বৈশিষ্টসমূহ

ওয়াল্টন৫.৫ ইঞ্চি ফুল এইচডি ডিসপ্লে সমন্বিত ওয়াল্টন Primo ZX স্মার্টফোনটির স্লিম বডি এবং মসৃণ ফিনিশিং ফোনটিকে আরও আকর্ষনীয় করতে পারতো, কিন্তু এর ডিজাইনে তেমন আহামরী কিছু পরিলক্ষিত হয়নি। হার্ডওয়্যার কনফিগারেশন এবং দামের বিবেচনায় ফোনটিকে হাতে নিয়ে সেরকম অভিজাত সেট বলেও মনে হয়না কেবল এর সাধাসিধে ডিজাইন-এর কারণে। ফোনটির ডিসপ্লে বড় হওয়ায় এতে এ্যাপস ব্যবহারের সুবিধা হয়েছে সত্যি কিন্তু এতো বড় ডিভাইস কানের পাশে ধরে কথা বলতে কারো কারো কিছুটা অস্বস্তি লাগতে পারে।

ওয়াল্টন Primo ZX-এ সংযোজিত হয়েছে ৫.৫ ইঞ্চি আইপিএস২ এফএইচডি ডিসপ্লে। ডিসপ্লেটির পিকজেল ডেনসিটি ৪০১ ppi যা প্রশংসনীয় এবং 4K ভিডিও প্লে-ব্যাক-এর জন্য প্রয়োজনীয়। এর নেটিভ রেজুলুশন ১০৮০পি। আইপিএস২ ডিসপ্লে এবং উচ্চ মাত্রার ppi ব্যবহারের কারনে ফোনটির ব্যাটারী ব্যবহার সুপার এমোলেড ডিসপ্লে থেকে বেশী। অতএব ফোনে যারা হাইএণ্ড গেমিং খেলে অভ্যস্ত তাদের দিনে দুই থেকে তিনবার এই ফোনটিকে চার্জ করার ঝামেলা ভোগ করতে হতে পারে। তবে কেবল ওয়াই-ফাই ব্যবহার করে ইন্টারনেট ব্রাউজিং, স্কাইপিং, ফেইসবুকিং, অথবা কল করা ও কল ধরা ইত্যাদি কাজে ফোনটি ফুল চার্জের পর প্রায় ৩৫ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যাটারি ব্যাকআপ দেয়।

ডিসপ্লের সুরক্ষার জন্য ওয়াল্টন Primo ZX-এ সংযোজন করা হয়েছে থার্ড জেনারেশন কর্নিং গোরিলা গ্লাস যা হালকা ড্রপ এবং স্ক্র্যাচপ্রুফ। ডিসপ্লের উপরেই আছে এর ৮ মেগাপিক্সেল অটোফোকাস সেকেন্ডারী ক্যামেরা, প্রক্সিমিটি সেন্সর এবং ইয়ার প্যাড। সেটটির ডান পাশের প্যানেলে রয়েছে ভলিউম বাটন এবং বামপাশে রয়েছে একটি সিঙ্গেল মাইক্রোসিম স্লট। ফোনটির উপরের প্যানেলে রয়েছে পাওয়ার বাটন এবং একটি ৩.৫ মি.মি অডিও পোর্ট। এর নিচের প্যানেলে রয়েছে একটি মাইক্রো ইউএসবি পোর্ট, মাইক্রোফোন, এবং ডুয়াল ভেন্টিলেশন সিষ্টেম যা সেটটিকে বাতাস চলাচলের মাধ্যমে ঠান্ডা রাখবে, যদিও একটানা অনেকক্ষণ যাবত ব্যবহার করলে সেটটি কিছুটা গরম হয়ে যায়। এই সেটটির একটি সমস্যা হলো এর কোন এক্সটারনাল মেমোরি কার্ড স্লট নেই। তাই ৩২ গিগাবাইট বিল্ট ইন মেমোরি শেষ হয়ে গেলে ব্যবহারকারীকে ড্যাটা ট্রান্সফারের ঝামেলা ভোগ করতে হবে। তবে সেটটির একটি ভালো দিক হলো এর ফুল ক্যাপাসিটিভ টাচ যা একসাথে ১০টি টাচ সনাক্ত করতে সক্ষম।

গুণগত মান ও কার্যদক্ষতা

ওয়াল্টন Primo ZX-এর পারফর্মেন্সের কারনেই সেটটি মোবাইলপ্রেমীদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কারণ এতে ব্যবহার করা হয়েছে স্ন্যাপড্রাগন ৮০০ চিপসেট যার রয়েছে ২.২ গিগাহার্টজের কোয়াডকোর সিপিইউ, ৩ গিগাবাইট লো পাওয়ার র‌্যাম এবং এড্রিনো ৩৩০ জিপিইউ। যার কারনে অন্যান্য স্মার্টফোনের তুলনায় এর পারফরমেন্স সবার কাছে চোখে পড়ার মত। Antutu বেঞ্চমার্ক টেষ্টে ফোনটির স্কোর ৩৪১০১ যা Sony Z Ultra থেকে অনেক বেশী এবং Samsung Galaxy Note 3 এর প্রায় কাছাকাছি। সেটটির মাল্টিটাস্কিং এর ক্ষমতা প্রশংসার দাবী রাখে। কয়েকটি হাই পারফর্মেন্স এপ্লিকেশন একইসাথে ব্যবহার করা গেছে কোন ঝামেলা এবং ল্যাগ ছাড়াই।

এর জিপিইউ এড্রিনো ৩৩০-এর কথা না বললেই নয়। গ্রাফিক্স-ইন্টেনসিভ গেমিং এর জন্য জিপিউটি বেশ কার্যকর। টেস্টিং-এর সময় আমরা জনপ্রিয় এন্ড্রয়েড গেম নোভা ৩, মডার্ন কম্ব্যাট, এস্ফাল্ট ৮, রিয়্যাল রেসিং ৩ ইত্যাদি গেমসগুলো মোবাইল্টিতে কোন ল্যাগ ছাড়াই খেলতে পেরেছি। এর ৫.৫ ইঞ্চি ক্রিস্প ডিসপ্লের ব্রাইটনেস, কন্ট্রাস্ট এবং কালার এক্সপোজার ছিল সন্তোষজনক। তবে গেমিং প্রসঙ্গে বলতেই হয় যে, এইরকম একটি হাই পারফর্মেন্স জিপিইউ-এর জন্য ব্যাটারী ব্যাকআপ বেশ কম বলেই মনে হয়েছে আমাদের কাছে।

অপারেটিং সিষ্টেম হিসেবে ওয়াল্টন Primo ZX-এ ব্যবহার করা হয়েছে এন্ড্রয়েড জেলি বিন ৪.২.২। কিন্তু এখানে ষ্টক এন্ড্রয়েড ব্যবহারের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে স্পেশাল ইউজার ইন্টারফেস Amigo 2.0 যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে এনেছে পরিবর্তন। যেমন এখন এপ্লিকেশন সার্চ করার জন্য কোন আলদা বাটন থাকার পরিবর্তে সব এপ্লিকেশন দেখা যাচ্ছে হোমস্ক্রীনেই। যারা সবসময় ষ্টক এন্ড্রয়েড ব্যবহার করে অভ্যস্ত তাদের জন্য এই ফিচারটি বিরক্তিকর বলেও মনে হতে পারে। এছাড়াও এপ্লিকেশনগুলোর ফন্ট প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বড় করা হয়েছে বলে আমাদের মনে হয়েছে। বড় ফন্টের কারণে ইউআই-এর সৌন্দর্য কিছুটা হলেও নষ্ট হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তবে অনেকের কাছে এটা একটি কাঙ্খিত ভালোলাগার বিষয়ও হয়ে উঠতে পারে।

স্মার্টফোনটির ক্যামেরার কথা আলাদাভাবে না বললেই নয়। এর প্রাইমারী ক্যামেরা ১৬ মেগাপিক্সেলের যাতে ব্যবহার করা হয়েছে কাষ্টম মেইড লারগন এম৮ লেন্স যা ৮টি লেয়ারের সমন্বয়ে গঠিত। এর কাস্টমাইজড এলইডি ফ্ল্যাশলাইট অন্যান্য এলইডি ফ্ল্যাশলাইটের তুলনায় ৬০% বেশী উজ্জ্বল। তারপরও কম আলোতে ছবি তোলার পর ছবিতে নয়েজ পেয়েছি। দিনের বেলায় তোলা ছবির কোয়ালিটি সন্তোষজনক ছিল। ক্যামেরাটির সেন্সর Xperia Z1 এবং iPhone 5 থেকে কোন অংশে কম বলে মনে হয়নি আমাদের কাছে। এর সেকেন্ডারী ক্যামেরা ৮ মেগালিক্সেলের যা সচারচর দেখা যায় না। সেকেন্ডারী ক্যামেরাটির পিকচার কোয়ালিটি বেশ ভালো বলেই মনে হয়েছে আমাদের কাছে।

সেটটিতে সংযোজিত হয়েছে 4K ভিডিও প্লেব্যাক প্রযুক্তি যা আগে কোন ওয়াল্টন সেটে দেখা যায় নি। যদিও এই ক্ষেত্রে আরও ইম্প্রুভমেন্টের সুযোগ রয়েছে তারপরও ফিচারটির উপস্থিতি আসলেই প্রশংসনীয়।

এছাড়া এতে ব্যবহার করা হয়েছে Yamaha-এর অডিও চিপসেট। সাউন্ড কোয়ালিটি যথাযথ মনে হয়েছে। এর হেডফোনের গুণগত মান ভালো এবং আমরা তেমন কোন সাউন্ড ডিসটরশন লক্ষ্য করিণি। তবে সেটের সাথে আসা হেডফোনটির চাইতে বোস-এর হেডফোনে আরও ভালোমানের সাউন্ড আউটপুট পেয়েছি আমরা। তবে সাউন্ড ক্লারিটির জন্য সেটটিতে বেইজ এবং ট্রিবল কাস্টমাইজেশনের অপশন আছে।

ওয়াল্টন Primo ZX-এ Walton প্রথমবারের মতো এনএফসি প্রযুক্তির সংযোজন ঘটিয়েছে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে অন্য সেট থেকে সহজেই ডাটা ট্রান্সফার করা যাবে। এছাড়াও গতানুগতিক অন্যান্য সেস্নর ছাড়াও প্রথমবারের মত ব্যবহার করা হয়েছে প্রেশার সেন্সর। স্মার্ট জেসচারে যোগ করা হয়েছে ডাবল ক্লিক ওয়েক এবং কুইক অপারেটিং – এই দুইটি নতুন জেসচার। সেটটি ষ্ট্যান্ডবাই মোড এ থাকলেও স্ক্রীনের উপর দুইবার ট্যাপ করলে সেটটি সাথে সাথে আনলক হয়ে যাবে কিন্তু এক্ষেত্রে পাসওয়ার্ড দেয়া থাকলে পাসওয়ার্ড দিতেই হবে। কুইক অপারেটিং জেসচারে ষ্ট্যান্ডবাই স্ক্রীনের উপর C শেপ আঁকলেই সরাসরি ক্যামেরা চালু হয়ে যাবে।

সেটটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ২৭৫০ mAh লিথিয়াম আয়ন পলিমার ব্যাটারী। তবে এই রকম হাই পারফরমেন্স একটি স্মার্টফোনের জন্য ব্যাটারীর ব্যাকআপ ক্যাপাসিটি আরও বেশী হলে সেটটি যথার্থ হত বলে আমার বিশ্বাস।

সুবিধাঅসুবিধা
ভালো হার্ডওয়্যার, ভালো ক্যামেরা। এন্ড্রয়েড কিটক্যাট-এ আপগ্রেডেবল। 4K ভিডিও প্লেব্যাক, কার্জকর জেসচার এবং সেন্সর। ডিজাইনে আভিজাত্য নেই। ব্যাটারী ব্যাকআপ যথেষ্ট নয়। এক্সটারনাল কার্ড স্লট নেই, Amigo 2.0 UI এন্ড্রয়েড ইউজার ফ্রেন্ডলি নয়।

সিদ্ধান্ত

দ্রুতগতিসম্পন্ন স্মার্টফোন কিনতে আগ্রহীদের জন্য স্ন্যাপড্রাগন ৮০০ সমৃদ্ধ এই ওয়াল্টন PRIMO ZX ফোনটি যথাযথ। এর প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি ক্যামেরায় ছবি যথেষ্ট ভালো ওঠে। গ্রাফিক্স ইন্টেন্সিভ গেম খেলার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী জিপিইউ-ও রয়েছে সেটটিতে। তবে মেমোরী কার্ড স্লট না থাকায় যারা প্রচুর হাই-এন্ড এপ্স ব্যবহার করেন তাদেরকে ঝামেলায় পড়তে হতে পারে। সেটটি কেনার আগে এই বিষয়গুলোর দিকে নজর রাখার পরামর্শ রইল।

বিবরণ

প্রোডাক্ট এর নামঃ Walton Primo ZX
ডাইমেনশনঃ ১৫০.৬৬ * ৭৫ * ৯.৭ মি.মি
ওজনঃ ১৫০ গ্রাম
ডিসপ্লেঃ আইপিএস ২, ১৯২০*১০৮০ পিক্সেল, ৪০১ ppi
মেমোরিঃ ৩২ গিগাবাইট (ইন্টারনাল), ৩ গিগাবাইট র‌্যাম, মাইক্রো এসডি কার্ড স্লট নেই।
ক্যামেরাঃ ১৬ মেগাপিক্সেল প্রাইমারি ক্যামেরা, অটোফোকাস, এলইডি ফ্ল্যাশ, ৮ মেগালিক্সেল সেকেন্ডারী ক্যামেরা।
অপারেটিং সিষ্টেমঃ এন্ড্রয়েড কিটক্যাট ৪.২.২
প্রসেসরঃ স্ন্যাপড্রাগন ৮০০ চিপসেট, ২.২ গিগাহার্টজের কোয়াডকোর সিপিইউ
জিপিইউঃ এড্রিনো ৩৩০
ব্যাটারীঃ লিথিয়াম আয়ন ২৭৫০ mAh

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।