এফএন্ডডি W330BT ব্লুটুথ স্পিকার রিভিউ

রেটিংকিনবেন কোত্থেকে
GoodN/A

বাংলাদেশে ফেন্ডা (F&D নামেই বেশী পরিচিত)-এর যাত্রা শুরু হয় এদের ফ্লাগশিপ পণ্য এফএন্ডডি F6000 ৫.১ চ্যানেল স্পিকার দিয়ে। এফএন্ডডি F6000-এর ভারী বেইজ, স্পষ্ট টুইটার, এবং লাউড আউটপুটের কারণে এটা ক্রেতাদের নজর কাড়ে এবং দাম সাধ্যের নাগালে থাকায় বেশ দ্রুত জনপ্রিয়তাও অর্জন করে। আজকে আমরা এফএন্ডডি W330BT ব্লুটুথ স্পিকার -এর রিভিউ করবো। তবে তার আগে জানা প্রয়োজন যে সব ব্লুটুথ স্পিকারগুলোই কিন্তু পুরোপুরি ওয়্যারলেস নয়।

এফএন্ডডি  W330BT ব্লুটুথ স্পিকারব্লুটুথ স্পিকারগুলোকে অনেকক্ষেত্রেই ওয়্যারলেস স্পিকার হিসেবে এ্যাডভারটাইজ করা হয়। কিন্তু বাজারের অধিকাংশ ব্লুটুথ স্পিকারই সম্পূর্ণভাবে ওয়্যারলেস নয়। এক্ষেত্রে বিক্রেতারা ওয়্যারলেস বলতে মূলত কোন ব্লুটুথ ডিভাইস (যেমন স্মার্ট ফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ বা অন্যান্য১) এর সাথে স্পিকারের তারহীন সংযোগকে বোঝায়। অর্থাৎ আপনার ব্লুটুথ ডিভাইস এবং ব্লুটুথ স্পিকারের মধ্যে কোন তারের সংযোগ ছাড়াই অডিও প্লে করতে পারবেন। কিন্তু অধিকাংশ ২.১ বা আরও বেশি চ্যানেলের ব্লুটুথ স্পিকারের ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে সাবউফারের সাথে স্যাটেলাইটগুলো তারের মাধ্যমেই কানেক্ট করতে হচ্ছে। এফএন্ডডি W330BT ব্লুটুথ স্পিকার-ও এর ব্যতিক্রম নয়। অর্থাৎ এফএন্ডডি W330BT আপনাকে তারের ঝামেলা থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি দিতে পারবে না। তারহীন (ওয়্যারলেস) স্পিকার পেতে হলে আপনাকে আসলে ওয়াই-ফাই (Wi-Fi) প্রযুক্তির স্পিকার (যেমন: Microlab FC362W) খুঁজতে হবে।

নকশা, নান্দনিকতা ও বৈশিষ্টসমূহ

এক নজরে পছন্দ করার মতো সুন্দর নয় W330BT। এর চারকোনা আকৃতির বেইজ এবং স্যাটেলাইটগুলোর সাথে কালো আর গোল্ডেন কালারের কম্বিনেশনটা আমাদের কাছে ঠিক মানানসই লাগেনি। বাড়ির অন্যান্য আসবাবপত্রের মধ্যে গোল্ডেন কালারটা একটু বেশিই চোখে পড়ে। তবে এফএন্ডডি-এর অন্য মডেলের স্পিকারগুলোর মতোই W330BT-ও বেশ মুজবুত গড়নের এবং টেকসই। দেখতে যথেষ্ট আকর্ষণিয় না হলেও ওয়াটেজ-এর দিক থেকে W330BT-কে ভালো বলতে হবে। ৬.৫ ইঞ্চি সাবউফার, ২.৫-ইঞ্চি সাটেলাইট ড্রাইভার সমৃদ্ধ W330BT-এর মোট আরএমএস আউটপুট ক্ষমতা ৫৬ ওয়াট। ব্লুটুথ স্পিকার হিসেবে এর আউটপুট ক্ষমতা প্রশসংসার দাবীদার। তবে সত্যিই এটা যথেষ্ট ভালো আউটপুট দিতে সক্ষম কিনা সে ব্যাপারে আমরা নিচের পারফরমেন্স সেকশনে আলোচনা করেছি। তবে আরও একটি বিষয় এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, W330BT ব্লুটুথ ভারশন ২.১ সাপোর্ট করে। কিন্তু বাজারের এখন ব্লুটুথ ভারশন ৪.০ সাপোর্ট করে এরকম পণ্যের চাহিদা বেশি কেননা ব্লুটুথ ভারশন ৪.০ আরও বেশি দূরত্ব কভার করে এবং এর ইন্টারফেরেন্স কম। তবে ব্লুটুথ ৪.০ ডাওনওয়ার্ড কম্পাটিবল অর্থাৎ আপনার স্মার্ট ফোন, ট্যাবলেট, বা ল্যাপটপ ব্লুটুথ ৪.০ বা ব্লুটুথ ৪.১ ডিভাইস হলেও সেটা অনায়েসে W330BT-কে সাপোর্ট করবে।

এফএন্ডডি  W330BT ব্লুটুথ স্পিকারপারফরমেন্সের প্রশ্নে যাবার আগে এর ডিজাইন নিয়ে আরও কিছুটা আলোচনা করবো। এর সমুখ প্যানেলে বড় একটি ভলিউম কন্ট্রোল রয়েছে। ভলিউম কন্ট্রোলটির চারপাশ জুড়ে রয়েছে সাদা আলোর বৃত্তাকার লেড লাইট। পাওয়ার অন করলেই দৃষ্টিনন্দন লেড লাইটটা জ্বলে ওঠে। বামের প্যানেলটা সাবউফারের শব্দ নির্গমনের জন্য, এবং ডানের প্যানেলটাতে রয়েছে ট্রেবল ও বেইজ কন্ট্রোল, সোর্স, পেয়ারিং, অন/অফ সুইচ এবং স্যাটেলাইটগুলো যুক্ত করার জন্য আরসিএ কানেক্টর পোর্ট। সমস্যা হলো এটাকে কোনদিকে মুখ করে রাখবেন। ভলিউম কন্ট্রোলটি সামনের দিকে রাখলে ডান দিকে স্যাটেলাইটের তারগুলো চোখে পড়ে এবং খারাপ দেখায়, অন্যদিকে সাবউফারের মুখটি সামনের দিকে রাখলে ভলিউম কন্ট্রোল ও দৃষ্টিনন্দন সাদা লেডলাইটটি চলে যায় ডান সাইডে, অর্থাৎ সরাসরি চোখে পড়ে না। তবে এভাবে রাখলে কানেক্টর প্যানেলটি পেছনে থাকে ফলে তারের জটলা কিছুটা হলেও চোখের আড়ালে থাকে।

গুণগত মান এবং কার্যদক্ষতা

এফএন্ডডি W330BT ব্লুটুথ স্পিকার -এর সাথে আমরা খুব সহজেই iPhone 4s, iPhone 3G, এবং HTC One -এর ব্লুটুথ সংযোগ (Pairing) ঘটাতে সক্ষম হই। তিনটি ডিভাইস থেকেই আমারা একে একে অডিও প্লেব্যাক করি। এফএন্ডডি W330BT-এর অডিও আউটপুট ছিল বেশ সন্তোষজনক। আমরা বিভিন্ন জনরার (যেমন পপ, রক, মেটাল, হেভি মেটাল) গান বাজিয়েছি। প্রতিটি গানেই W330BT-এর বেইজ এবং টুইটার সাউন্ড রিপ্রোডাকশন ছিল প্রায় অবিকল২।

এফএন্ডডি  W330BT ব্লুটুথ স্পিকারW330BT-এর সাইজ, বাজার মূল্য এবং ব্লুটুথ সাপোর্টকে মাথায় রেখে বলতেই হয় যে এর সাউন্ড আউটপুট প্রশংসার দাবী রাখে। তবে এর ব্লুটুথ রেঞ্জ খুবই কম। আমরা সর্বোচ্চ ১৭ ফিট দূর থেকে ইন্টারাপশন ছাড়া গান বাজাতে পেরেছি। কিন্তু এর চে বেশি দূরে গেলেই ব্লুটুথ রিসেপশনে সমস্যা হয়েছে। অপরদিকে ফোন ও W330BT-এর মাঝে দেয়াল বা আসবাবপত্র থাকলে ব্লুটুথ রিসেপশনের এই সমস্যা ১২ ফিট দূরত্বের মধ্যেও হতে পারে। তবে রেঞ্চের মধ্যে থাকলে W330BT ইন্টারাপশনমুক্ত সাউন্ড আউটপুট দেয়। W330BT এর ভলিউম যথেষ্ট লাউড। তবে ভলিউম ৯০%-এর উপরে সেট করলে বেইজ ডিসটর্ট করে। ৯০% ভলিউম-এর নিচেও এটা যথেষ্ট লাউড; এবং রাতের বেলায় ৬০% ভলিউম সেটিং-এও যে প্রতিবেশীদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে তাতে সন্দেহ নেই। যেকোন ঘরোয়া পার্টিতে যেকেউ চাইলেই তার ব্লুটুথ ফোন দিয়ে গান বাজাতে পারবে এবং এর হাই ভলিউম, ভারী বেইজ এবং স্পষ্ট টুইটার সহজেই পার্টিকে আরও মুখর করে তুলবে।

সুবিধাঅসুবিধা
ভালো ওয়াটেজ। ৬.৫ ইঞ্চি সাবউফার ড্রাইভার। যথেষ্ট ভারী বেইজ। লাউড ভলিউম। ট্রেবল ও বেইজ কন্ট্রোলার। ডিজাইন একটু বেশি চাকচিক্যময়। ব্লুটুথ ভার্সন ২.১, অতএব রেঞ্জ কম। ভলিউম ৯০%-এর বেশি সেট করলে ডিসটর্ট করে। দাম একটু কম হলে ভালো হতো।

সিদ্ধান্ত

W330BT-এর ব্লুটুথ রেঞ্জ কম এবং এটা খুব একটা দৃষ্টি নন্দন স্পিকার নয়। কিন্তু এর অডিও আউটপুট প্রশংসনীয়। এর ভলিউম যথেষ্ট উচু, বেইজ আউটপুট বেশ ভারী। ব্লুটুথ স্পিকার হিসেবে এর দাম অন্যান্য ২.১ চ্যানেল স্পিকারের থেকে প্রায় দেড়, দুইগুণ বেশি। তবুও অডিউ আউটপুটকে বিবেচনায় রেখে অন্যান্য ২.১ চ্যানেল ব্লুটুথ স্পিকারগুলোর মধ্যে এফএন্ডডি W330BT ব্লুটুথ স্পিকার -কে অন্যতম সেরা না বলে উপায় নেই।

বিবরণ

পাওয়ার আউটপুট: ১৪*২ +২৮ ওয়াট (৫৬ ওয়াট)
স্যাটেলাইট ড্রাইভার: ২.৫ ইঞ্চি, ফুল রেঞ্জ
সাবউফার ড্রাইভার: ৬.৫ ইঞ্চি
ফ্রিকোয়েন্সি রেসপন্স: ২৫০ – ২০ কিলোহার্জ (স্যাটেলাইট) ৩০ – ১০০ কিলোহার্জ (সাবউফার)
সিগনাল টু নয়েজ রেসিও: ≥ ৭০ ডিবি
ডায়মেনশন: ১৪০*১৩৪*১৩৮ মিমি (স্যাটেলাইট) ২২০*২৩০*২৪৩ মিমি (সাবউফার)
ওজন: ৩.৫ কেজি (নেট)

ফুটনোট ১: স্মার্ট টিভিগুলোতে অধিকাংশক্ষেত্রেই ওয়াই-ফাই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ ব্লুটুথ স্পিকার টিভির সাথে তারহীনভাবে সংযুক্ত করা যাবে না।

ফুটনোট ২: আমরা যে গানগুলো W330BT-বাজাই সেগুলো প্রথমে লজিটেক z906-এ বাজিয়ে শুনেছি যাতে করে কোথাও কোন শব্দের ঘাটতি ও ডিসটরশন থাকলে সেটা ধরতে পারি। আমরা উল্লেখযোগ্য কোন ঘাটতি ও ডিসটরশন খুঁজে পাইনি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।